তালিবানের সামনে জোর গলায় নারী অধিকারের দাবি মহিলা সাংবাদিকের, পরবর্তীতে আফগানিস্তানে খোঁজ মিলছে না তার

ডেস্ক: আফগান! আফগান! তালিবান! তালিবান! গোটা বিশ্বের মুখে এখন একটাই প্রসঙ্গ। 15ই আগস্ট তালিবানদের কাবুল দখলের পর জীবন মরণ দশা আফগানবাসীদের। বিশেষ করে মহিলা।

কাবুল দখলে নেওয়ার দুদিন পরই তালিবানের শীর্ষ নেতার সাক্ষাৎকার নেন টোলো নিউজের মহিলা সাংবাদিক বেহেস্থা আরগান্দ। আর এটাই ছিল তালিবান নেতার প্রথম সাক্ষাৎকার, যা নিয়েছিলেন একজন মহিলা সাংবাদিক। এবার তিনিই মালালা ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকার নেন। আর এই সাক্ষাৎকারের পর দেশ ছেড়ে পালালেন তিনি।

আফগানিস্তানের নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আন্তর্জাতিক মহল। আর সেই সময়ই তালিবানের শীর্ষ নেতার মুখোমুখি বসে সাক্ষাৎকার নেন মহিলা সাংবাদিক বেহেস্থা আরগান্দ। প্রাণভয়ে সরিয়ে, সাহসের সাথে তীক্ষ্ণ মন্তব্য ছুড়ে দেন তালিবানি নেতার ওপর। কিন্তু সাক্ষাৎকার শেষের এই প্রাণভয়েই পালাতে বাধ্য হন তিনি।

বেহেস্থা জানান, তাঁর সাংবাদিক জীবনের অন্যতম উচ্চতায় ছিলেন তিনি। মাত্র ৯ বছর বয়স থেকে তিনি সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু সেই স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে হয় একটিই কারণে, তালিবান। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পর তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাকি লক্ষাধিক মানুষের মতো আমিও তালিবানদের ভয়েই দেশ ছেড়েছি। যেভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে তালিবানরা, তাতে যে কোনও দিন খুন হয়ে যেতে পারতাম।”
দেশ ছাড়লেও এখনও আশা ছাড়তে নারাজ বেহেস্তা। তিনি বলেন,”তালিবানরা যা বলেছে, সত্যিই যদি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং দেশের পরিস্থিতি শুধরে যায়। তবে আমি দেশে ফিরে আসব। যদি আমার মনে হয় যে, আমি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত, তবে দেশের জন্য, আমার প্রিয় মানুষদের জন্য ফের আফগানিস্তানেই ফিরে আসব।”

তালিবানের ভয়ে একের পর এক সাংবাদিক কাজ ছেড়ে দেওয়ায় সমস্যার মুখে পড়েন টোলো নিউজের মালিক সাদ মোহসেনি। তিনি বলেন, “বেহেস্থা বা বাকি সাংবাদিকদের কাজ ছাড়ার সিদ্ধান্তই প্রমাণ যে বাস্তবে আফগানিস্তানে কী হচ্ছে। সমস্ত পরিচিত ও ভাল সাংবাদিকরা কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমরা যে কজন রয়েছি, তারা পাগলের মতো কাজ করছি। পুরনো লোকজনদের জায়গায় নতুন লোক নিয়োগ করার চেষ্টা চলছে। একদিকে, প্রাণভয়ে সাংবাদিকরা বাইরে যেতে চাইছেন না, অন্যদিকে আমাদের উপর চ্যয়ানেলকে সচল রাখার দায়িত্বভারও রয়েছে।”

কীভাবে তালিবানি নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি, এই প্রশ্নের জবাবে বেহোস্থা বলেন,, “আমি আফগান মহিলাদের জন্য কাজটি করেছিলাম।” নিজেদের অধিকার তুলে ধরতে তিনি তালিবানি নেতাকে বলেছিলেন, “আমরা নিজেদের অধিকার চাই। আমরা কাজ করতে চাই, সমাজের অংশ হিসাবে থাকতে চাই। এটাই আমাদের অধিকার।”

তালিবানের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “যদি আমরা ভয়ে বাড়িতে বসে থাকি বা কাজে না যাই, তবে ওরাই বলবে যে মহিলারা কাজ করতে চায় না। ”

তালিবানরা মৌখিক ভাবে শরিয়া আইন মেনে নারী সুরক্ষা ও অধিকারের আইনের কথা বললেও বাস্তবে তার উল্টো টাই দেখা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *