ঈদের দিন হিন্দু প্রতিবেশীর দেহ সৎকারে কাঁধ এগিয়ে দিলেন মুসলিম যুবকরা

ডেস্ক: কোরোনায় মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহের ধারের কাছ দিয়েও যেতে চায় না কেউ। সেটি কে কাঁধে তুলে সৎকারের চিন্তা করা তো কল্পনাতীত। এখন প্রায়শই এমন ঘটনা শোনা যায় যেখানে প্রতিবেশীরা একঘরে করে দিয়েছে কোরোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে। এমনই আর এক ঘটনা আজ দেখা গেছে হুগলির পোলবা-দাদপুর গ্রামে। যেখানে গ্রামের বছর বাহাত্তরের হরেন্দ্রনাথ সাধুখাঁ গতকাল রাতে মারা যান। কিন্তু কোরোনার ভয়ে তাঁর দেহ সৎকারে কেউ এগোচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার রাত থেকে পড়ে রয়েছে দেহ। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলেন গ্রামের মুসলিম যুবকরা। ঈদের দিন হিন্দু প্রতিবেশীর দেহ সৎকারে কাঁধ এগিয়ে দিলেন এই মুসলিম যুবকরা।

আশিক মোল্লা, গোলাম সুবানী, গোলাম সারবার, সেখ সানি এই গ্রামেরই বাসিন্দা। ঈদের নামাজ পড়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছিলেন। হঠাৎই খবর পেলেন গ্রামেরই হরেন্দ্রনাথ সাধুখাঁ গত হয়েছেন।

জানা গিয়েছে, গত তিনদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু কোরোনা পরীক্ষা করার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। কোরোনায় মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কাতে প্রতিবেশীরা তাঁর বাড়ির আশেপাশে ঘেঁষছেন না। করোনা রিপোর্ট না থাকায় প্রশাসনেরও সাহায্য নিতে পারছিল না পরিবার। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে মৃত আগলে বসে থাকেন তারা। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বাড়িতেই পড়ে থাকে মৃতদেহ। অসহায় হয়ে পড়েন বৃদ্ধের ছেলে চন্দন সাধুখাঁ।

সেই খবর পৌঁছয় আশিক, গোলাম, সানিদের কাছে। ঈদের নামাজ শেষ হতেই তাঁরা সোজা হাজির হন প্রতিবেশী সাধুখাঁর বাড়িতে। নিজেরাই খাট বেঁধে, ফুল দিয়ে সাজিয়ে মৃতদেহ কাঁধে তোলেন। নিয়ে যান স্থানীয় শিরপুল শ্মশানে। বৃদ্ধের ছেলে চন্দনের সঙ্গে দাহকার্যেও হাত লাগান তারাও ।

কোরোনার অতিমারিতে প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয় মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এমন একটা অসহায় সময়ে ভয় সরিয়ে এগিয়ে এসেছে নির্স্বার্থে আশিক, গোলাম, সানিরা। মানবিকতার কাছে হার মানলো ধর্মের ভেদাভেদ। এটাই বাংলার ঐতিহ্য, এটাই বাংলার আসল পরিচয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *