ধোনির হাতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের এক দশক

সুশান্ত মণ্ডল: দীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান৷ ২ এপ্রিল, ২০১১৷ অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত৷ কপিল দেবের পর মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে উঠেছিল ওয়ান ডে বিশ্বকাপ৷ ‘হরিয়ানা হ্যারিকেনে’র পর ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বমঞ্চে আলোকিত করেছিলেন ‘রাঁচির রাজপুত্র’৷

২৫ জুন, ১৯৮৩ কপিলের হাত ধরে প্রথমবার বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত৷ ২৭ বছর, ৯ মাস ও ৭ দিন পর ধোনির হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ৷ ১০ বছর আগের ২ এপ্রিলের রাত মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম সাক্ষী ছিল ধোনির বিশ্বজয়ের৷ যা কাশ্মীর থেকে কন্যকুমারীকা, আসমুদ্রহিমাচল গর্জে উঠেছিল ধোনির জয়ধ্বনিতে৷

এক দশক পর ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বজয়ের স্বাদ কিছুটা ফিকে হলেও এটা ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের অনন্য মাইলস্টোন৷ কারণ ঠিক আগের বিশ্বকাপে অর্থাৎ ২০০৭ ক্যারিবিয়ান বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় ঘণ্টা বেজেছিল ভারতের৷ প্রথম রাউন্ডেই ক্যারিবিয়ান বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়ে দেশে ফেরার কাপুরুচিত অ্যাখ্যা পেয়েছিলেন ধোনিরা৷ এমনকি ক্রিকেটপাগল দেশের সমর্থকদের ঘৃণা ও রোষের কারণে রাঁচিতে নিজের বাড়িও ফিরতে পারেননি ধোনি৷ চারপর বছর পর যেন সবই জবাব দিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া৷

ভারতীয় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ধোনি৷ শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান কুলশেকারাকে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ক্যাপ্টেন ধোনি৷ যা ক্রিকেটবিশ্বে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ ধোনির হাতে বিশ্বকাপ ওঠার পর রাত জেগেছিল সারা দেশ৷ শুধু দেশেই নয়, বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন৷

১০ বছর পর ফিরে দেখা বাইশ গজে ভারতের বিশ্বজয়

* দীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান

*২ এপ্রিল, ২০১১ দ্বিতীয়বার ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত

*‘হরিয়ানা হ্যারিকেনে’র পর ভারতের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক ‘রাঁচির রাজপুত্র’

*কপিল দেবের ২৭ বছর ৯ মাস ৭ দিন পর ধোনির হাতে ওঠে বিশ্বকাপ

*কাশ্মীর থেকে কন্যকুমারীকা, আসমুদ্রহিমাচল গর্জে উঠেছিল ধোনির জয়ধ্বনিতে

*ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত

*প্রথমে ব্যাটিং করে ২৭৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা

*১০ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া

*কুলশেকরাকে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ক্যাপ্টেন ধোনি

*১২৫ কোটি ভারতবাসীর সঙ্গে সত্যি হয়েছিল সচিন তেন্ডুলকরের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন

*মাত্র তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছিল গৌতম গম্ভীরের

*৯১ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন ধোনি

*‘ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন যুবরাজ সিং

ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয় হয়েছিল ভারত৷ প্রথমে ব্যাটিং করে মাহেলা জয়বর্ধনের ৮৮ বলে দুরন্ত ১০৩, কুমার সঙ্গকারার ৪৮, তিলকরত্নে দিলশানের ৩৩ রানে ভর করে ২৭৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা৷ বিশ্বসেরা হওয়ার জন্য ভারতের সামনে ছিল ২৭৫ রানের কঠিন টার্গেট৷ কিন্তু ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি৷ ইনিংসের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে বীরেন্দ্র সেহওয়াগকে ০ রানে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠিয়ে ভারতকে জোড় ধাক্কা দিয়েছিলেন লসিথ মালিঙ্গা৷ এখানেই শেষ নয়, সপ্তম ওভারে সচিন তেন্ডুলকরকে তুলে নিয়ে ভারতের দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন লঙ্কার এই ডানহাতি পেসার৷ ব্যক্তিগত ১৮ রানে সচিন যখন ড্রেসিংরুমে ফেরেন ভারতের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৩১৷

তারপর চার নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে অভিজ্ঞ গৌতম গম্ভীরকে সঙ্গ দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি নামক দিল্লির এক তরুণ৷ কোহলি ৪৯ বলে ৩৫ রান করলেও গম্ভীরের সঙ্গে তাঁর ৮৩ রানের পার্টনারশিপ ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল৷ বাকিটা ছিল গম্ভীর ও ক্যাপ্টেন ধোনির মোহিত ব্যাটিং৷ ১২২ বলে ৯৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের পথ চওড়া করেছিলেন গম্ভীর৷ মাত্র তিন রানের জন্য বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলেও প্রথম কোহলির সঙ্গে ৮৩, পরে ধোনির সঙ্গে ১০৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ভারতকে বিশ্বজয়ের মঞ্চে তুলে ধরে ছিলেন টিম ইন্ডিয়ার এই বাঁ-হাতি৷

গম্ভীরের ম্যারথন ব্যাটিংয়ে পাশে ফিনিশার হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন ধোনি৷ ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে দ্বিতীয়বার ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মাহি৷ ৪৯তম ওভারে কুলশেকরার দ্বিতীয় ডেলিভারি গ্যালারিতে ফেলে ভারতের আসমুদ্রহিমাচল উদ্বেলিত করেছিলেন ‘রাঁচির রাজপুত্র’৷ ধোনি ম্যাচের সেরা হলেও ‘ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন ফাইনালে ২১ রানে অপরাজিত থাকা যুবরাজ সিং৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *